তোকে চাই♥
part :1
বউ সেজে বসে আছি সেই সন্ধ্যা থেকে, এখন রাত প্রায় ২ টা কিন্তু যার জন্য এতো আয়োজন তারই আসার নাম নেই।।।বাসর রাতে সব মেয়েই হাজারো স্বপ্ন নিয়ে ঢুকে,,, কিন্তু আমার ব্যাপারটি ভিন্ন।। আমি স্বপ্ন নয় একরাশ ভয় নিয়ে বসে আছি।।।মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে শুভ্র ভাইয়া আমায় মেনে নিবে তো??নাকি সারাজীবন মরে মরে বাঁচতে হবে আমাকে??আমি রোদেলা।।সবাই আদর করে রোদ বলেই ডাকে।।আবরার আহমেদ শুভ্র, আমার স্বামী।।কয়েকঘন্টা আগেও যাকে ভাইয়া বলে ডেকেছি। মুহূর্তেই যেনো সব উলোট পালট হয়ে গেলো।।।কাল এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো আর আজই বিয়ের পীড়িতে বসতে হলো।।।দুই বোনকে একসাথে বিদেয় করলেন বাবা-মা।।কি এমন দোষ করেছিলাম??পরিবারের ছোট মেয়ে আমি,, তাই আমার ভাগে আদরটাও বেশিই ছিলো,,সাথে ছিল সীমাহীন স্বপ্ন।।। দরজা লাগানোর শব্দ পেলাম হয়তো উনি এসেছেন,,,অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে অবশেষে তার আগমন ঘটল।।আমি নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুন করার চেষ্টা করছি কারন আমি জানি এখন যা হবে তা হয়তো কোনো মেয়ের জন্যই প্রত্যাশিত নয়।।।আমি চুপচাপ বসে আছি,,,হৃদপিণ্ড বেরিয়ে আসার উপক্রম।। রুমে ভয়াবহ নিস্তব্ধতা।।এই নীরবতা ভেঙে শুভ্রই বলে উঠলো,,,
।
শুভ্রঃ রোদেলা??কেন করলে আমার সাথে এমন??আমার বাবার টাকার জন্য???তাছাড়া আর কিই বা হতে পারে,,,তোমাদের মতো মেয়েদের কাজই হলো টাকার জন্য অন্যের জীবন নষ্ট করে দেওয়া।।(শান্ত গলায়)
।
আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।।উনি সব দোষ কতো সহজে আমার ঘাড়ে দিয়ে দিলেন সাথে খারাপ মেয়ের পদবী।।।আমি মিডিলক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে,, তাই বলে লোভী নই।।।কিন্তু আজ সেই পদবীটাও পেয়ে গেলাম।।।হঠাৎ গায়ে কিছু পড়ায় ঘোর কাটলো,,প্রথমে বুঝতে না পারলেও কয়েক সেকেন্ড পরই বুঝতে পারলাম,, শুভ্র আমার শরীরে টাকা ছুঁড়ে ফেলছে আর বলছে,,,
।
শুভ্রঃ আরো চায় টাকা??বলো আরো চায়,???কতো টাকা দিলে মুক্তি দিবে আমায়,, বলো??(চেঁচিয়ে)
।
আমার চোখের পানি আর বাধঁ মানছে না।।।এই ১৭ বছরের জীবনে, কখনো নিজেকে এতোটা ছোট আর অসহায় মনে হয় নি।।।ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কান্না করি।।
।
শুভ্রঃ এসব নাটক বন্ধ করো।।।এসব করে আমাকে হাত করতে পারবে না,,,কখনো না।।।আর হ্যা আমার আশেপাশে আসার চেষ্টাও করবে না,,তাহলে আমার খারাপ রূপ টা দেখাতে বাধ্য হবো।।
।
আমিঃ দ,,,দেখুন আ,,,আপনি ভুল(কাঁপা স্বরে)
।
শুভ্রঃ চুপ একদম চুপপপপ।।।আর একটা কথা না।।।জানো? আমার তোমার প্রতি তাকিয়ে ঘৃনা হয়।।তুমি সব জানার পরও কিভাবে এমনটা করতে পারলে,,ছি।।
বলেই শুভ্র ব্যালকনিতে চলে গেলো।।আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিলেন না।।।খুব ক্লান্ত লাগছে আজ,,,শরীর নয় মনটা বড় ক্লান্ত আজ।।বিছানার একপাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়লাম।।।বাবা-মার কথা বড্ড মনে পড়ছে।।কেনো করলেন আমার সাথে এমন??কেনো??লাইফটাকে যদি এডিট করা যেতো তাহলে ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখটা মুছে ফেলতাম আমার জীবন থেকে সাথে শুভ্র নামের এই মানুষটাকেও,,,,
।
।
ফ্ল্যাসবেক.....
।
কলেজ শেষে বাসায় গিয়েই দেখি চারদিকে হৈচৈ।।বাড়ি ভরা মানুষ,,কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।।।আম্মুকে জিগ্যেস করায় বললো,,রুমু আপুকে নাকি দেখতে আসছে,,তার জন্যই এতো আয়োজন।।আশ্চর্য, রুমু আপুকে দেখতে আসবে ভালো কথা,,কিন্তু আমাদের বাসায় কেন?? সামনে টেস্ট এক্সাম কিছুই পড়ি নাই,,তারমধ্যে এতো ঝামেলা,,অসহ্যকর।।বিকেলে ছেলেপক্ষ এলো,,,ছেলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।।কে জানে দেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বেশি হয়ে গেছে কিনা,,সব বাপের মেয়ের জামাই ই এখন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।।। সবার বেশ পছন্দ হয়েছে।।ছেলে দেখতে মাশাআল্লাহ।।ছেলে বড় ফুপার বন্ধুর ছেলে তাই আর,জানা -শোনা নিয়ে ঝামেলা করে নি কেউ,,,ঠিক হলো,, ২৫ সেপ্টেম্বর কিছু মুরব্বি ও কিছু আত্মীয় এনে ঘরোয়া ভাবেই বউ নিয়ে যাবে তারা।।।সেই ২৫ সেপ্টম্বরই যে আমার জীবনের কাল হবে তা তখন বুঝতে পারি নি।।।বিয়ের আর দশদিন বাকি মাত্র।।।বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা সবার উৎসাহ আনন্দের সীমা নেই।।আমিও বেশ আনন্দেই ছিলাম,,,,কাজিনদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে ছোট আর রুমু আপু বড়,,,,,দেখতে দেখতে এসে গেলো সেই কাল বেলা ২৫ সেপ্টেম্বর....
0 Comments