গল্প__পারমিতা__❤️
পর্ব ------০৭
-----কি হলো মা,, কি হলো তোমার???
---নাহ,, তেমন কিছু না,, মাথাটা ঘুরে গেলো হঠাৎ।।
---আচ্ছা,,,তোমার সাথে ওষুধ না থাকলে আমাদের বাসায় কিন্তু ওষুধ আছে,, একটা খেয়ে নাও,,তোমায় দেখে ঠিক লাগছে না একদম।
--থাক,,আমি ঠিক আছি।দেখুন আমায় নিয়ে এতো টেনশন করার কিছু নেই ।।।
ধীরে ধীরে সোফা দেখে আবারো উঠে দাঁড়ালো আকাঙ্খা,,,,।।
----আচ্ছা,,, মা তুমি আমাদের মেয়ের ব্যপারে জানতে এতো দূর থেকে এলে কিন্তু,,,এখন পর্যন্ত নিজের পরিচয়টা দিলে না।।
আকাঙ্খা ভালো করেই বুঝতে পারলো এখন আর লুকিয়ে রাখার মতো কিছু নেই,,সবটা যখন সামনে চলেই এসেছে তার পরিচয় কেন গোপন থাকবে???
----আমার নাম আকাঙখা জামান,,,,আমি আরফানের স্ত্রী।।।ইন ফ্যাক্ট আমিও একজন ডাক্তার। আমরা দুজন একই হাসপাতালে চাকরি করি।।
আকাঙ্খার পরিচয় শুনে পারমিতার বাড়ির লোকজন সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকাতে লাগলো!!!
----কি বলছো,, তুমি আরফানের স্ত্রী!!!!!?কিন্তু আরফান??
---কিন্তু কি আঙ্কেল?
---আমরা এতোদিন যাবত জেনে এসেছি আরফান পারমিতার মৃত্যুর পর আর বিয়ে করেনি।।আর ও কখনো জানায়ও নি আমাদের।
-----নিজের সব কথা কি সবসময় সবার কাছে শেয়ার করতে পারে মানুষ ,,,,এই যে দেখুন আজ আমাকে অন্যের বাড়ি বয়ে নিজের হাসবেন্ডের পাস্ট হিস্টোরি শুনতে হচ্ছে,,,,সে তো আমাকেও তার অতীতের ব্যপারে কখনো কিছু বলে নি।।
---ব্যপারটা বড্ড অদ্ভুত হলো ,,, আমাদের তো সবকিছু তালগোল পেকে যাচ্ছে,আরফানকে যতদূর চিনি এমন কাজ করার ছেলে সে নয়।
আর হ্যাঁ,, তুমি বললে না আরফান তোমাকে তার অতীতের ব্যাপারে কখনো কিছু বলেনি,,, তুমি পারমিতাকে চিনলে কিকরে??তোমার তো ওর সম্বন্ধে কিছু জানার কথা নয়।।
----আমি পারমিতাকে দেখেছি!!!
----দেখেছো,,,তার মানে মারা যাবার আগে পারমিতার সাথে তোমার পরিচয় ছিলো নিশ্চয়ই,,,কই এতোক্ষণ তো বললে না আমাদের?
---মারা যাবার আগে নয়,,,আমার বয়স যখন দশ বছর তখন বাবা মায়ের সাথে বিদেশ চলে যাই,,,, বিদেশেই পড়াশুনা করি আমি,,, পড়াশুনে শেষে দেশে এসে চাকরি নিলাম,, সেটা খুব বেশী দিন আগে নয়,, মাত্র আট বছর হয়েছে আমি দেশে এসেছি,, আর দেশে আসার কয়েকমাসের মধ্যেই বিয়ে হয় আমার।।
-----সব বুঝলাম,, কিন্তু পারমিতাকে চিনলে কিকরে তুমি!??ওকে দেখলে কিভাবে? দেখো তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না আমরা!
----গত পরশু আপনাদের মেয়ে পারমিতা আমার হাসপাতালে এসেছিলো .....!!!সেখানেই ওর সাথে প্রথম দেখা আমার??
(সোজাসাপ্টা উত্তর আকাঙখার)
----তুমি কি ঠাট্টা করতে এসেছো আমাদের সাথে???যে মানুষটা নয় বছর আগে মারা গেছে তুমি তাকে গতপরশু দেখেছো ......তুমি কি বলছো নিজে বুঝতে পারছো তো??
(বাড়ির সবাই আকাঙখার অদ্ভুত কথাবার্তায় বিব্রত হয়,,,,বাড়ির সেই আগের পরিবেশটা আর বজায় রইলো না,,,, সবাই এক প্রকার আকাঙখার প্রতি ক্ষুব্ধ,, নিজেদের মৃত মেয়েকে নিয়ে অযাচিত ঠাট্টা করাটা মেনে নিতে পারছে না যেন কিছুতেই )
---আমি যা বলছি সজ্ঞানে বলছি,,আর শুধু দেখি নি,,পারমিতা এখনো আমার হসপিটালে আছে।।।
---মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার,,,দেখো আমাদের মনে হচ্ছে তুমি একেবারেই সুস্থ নও,অসুস্থ তুমি। আর আমাদেরকেও এখন অসুস্থ করতে চাইছো।।
---আচ্ছা,, পারমিতার কবরটা কোথায়??তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছিলো ???
আকাঙখার এই প্রশ্নে বাড়ির সবাই নিশ্চুপ।
সবার মৌনতা দেখে সে খুব অবাক হয়।
---কি ব্যাপার,, সবাই চুপ কেন আপনারা??কিছু তো বলুন।।।
---আমরা পারমিতাকে কবর দিতে পারেনি,,,কবর কিভাবে দেবো ওর লাশটা পর্যন্ত আজ অবধি খুঁজে পায়নি কেউ।। কিন্তু তার মানে তো এটা নয়,, ও এখনো বেঁচে আছে, বা ওর লাশটা অক্ষত আছে,, তুমি যেটা দাবি করছো??
---ওর লাশ গায়ের হয়ে গেলো কিকরে??
---পোস্টমর্টেম করতে নিয়ে যাবার সময় ওকে যে গাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় গাড়িটা দূর্ঘটনাবশত একটা খাঁদে পড়ে যায়,,।। ড্রাইভারের লাশ কোনোভাবে উদ্ধার করা গেলেও পারমিতার ডেডবডি আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।।
---দেখুন,,,এবার তো বিশ্বাস করুন আমার কথা,,, গত পরশু আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পারমিতার পোস্টমর্টেম করিয়েছি।।আর আপনারা হয়তো কেউ একটা কথা জানেন না,, পারমিতা কোনো দুর্ঘটনায় মারা যায় নি,, ওর পেটে একটা মারাত্মক বিষের শিশি পাওয়া গিয়েছে,,,,বিষটা এতোটাই ভয়ানক কাউকে মারার জন্য এই বিষ খাওয়ানের প্রয়োজন পড়ে না,,,শুধুমাত্র বিষের স্মেল যেকোন মানুষকে মেরে ফেলতে সক্ষম।। যদিও এই বিষ এখন আর বাজারে পাওয়া না, অনেক আগেই ব্যান করা হয়েছে।।
---তুমি কি বলছো মা এসব?? আমাদের মাথায় ঢুকছে না কিছুই।।আর আমাদের মেয়েকে কেউ কেন মারতে যাবে??
---আমি বলছি না কেউ ওকে মেরেছে, ও হয়তো নিজে থেকেই বিষটা নিয়েছে, বা নিতে বাধ্য হয়েছে। ওর মৃত্যুর ভেতরে এমন কোনো রহস্য আছে যা আমরা এখনো কেউ জানি না।
----তো আমরা এখন কি করবো মা,, তুমি বলে দাও।।তোমার কথা অনুসারে ওটা যদি পারমিতা লাশ হবে,, দীর্ঘ নয় বছর ওর লাশ অক্ষত আছে কিকরে,,, এতোদিনে তো পঁচে গলে যাবার কথা,, সেটা কেন হলো না।।??
---সেই প্রশ্নের উত্তর ই তো খুঁজে বের করতে হবে আমাদের,,, আর আমি চাই,, আপনারা আমার সাথে চলুন।। আমার হাসপাতালে চলুন। নিজেদের চোখেই দেখে নিবেন সবটা।।
আমরা কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না ওকে, আমার মনে হয় ও কিছু জানাতে চায়,, কিছু বলতে চায়।।কিন্তু বলতে পারছে না কোনো কারনে।।
যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের মনের ইচ্ছা পূরণ না হয়,, ও মরে গিয়েও মরতে পারছে না,,, নিজের মনের তীব্র ইচ্ছা আকাঙখা জীনব আর মৃত্যুর টানাপোড়েন রেখে দিয়েছে ওকে।।।
---একজন ডাক্তার হয়ে এই কথা বলছো তুমি?
---দেখুন আমি একজন ডাক্তার ঠিকই,,,কিন্তু সবার আগে আমি একজন মানুষ।।ডাক্তার হিসেবে অতিপ্রাকৃত জিনিস বিশ্বাস করা আমার জন্য শোভনীয় নয়,, কিন্তু মানুষ হিসেবে সেই স্বাধীনতা আছে আমার।। আপনারা দয়া করে চলুন আমার সাথে।।
---হ্যাঁ,,,আমরা অবশ্যই যাবো,,,তোমার কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে অবশ্যই যাবো,,কিন্তু তোমার হাসপাতাল তো অনেক দূরে এই শহর থেকে।
---হুমম,বেশ দূরে বটে।আমি নিজের গাড়ি নিয়ে এসেছি,,আমরা যতোটা দ্রুত সম্ভব পৌঁছে যাবো।।
অবশেষে আকাঙখা সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক,আর তার বিধবা মেয়ে অর্থাৎ পারমিতার মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।।
শহরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেলো।।
পারমিতার দাদা আর মাকে নিয়ে সোজা হাসপাতালে চলে আসলো।।।
এদিকে দিনের বেলায় ফোন অফ রাখতে হয়েছে,, নয়তো অরফান কল করে করে মাথা খারাপ করে দিতো,,,আকাঙ্খা চায় নি তার কাজের ভেতর কোনো বাধা পড়ুক।।
এখন নিশ্চয়ই সবাই টেনশন করছে তাকে নিয়ে,, আরফান ও করছে নিশ্চয়ই।।
আকাঙখা পারমিতার পরিবারের লোকজনদের সোজা মর্গের ভেতরে নিয়ে যায়।
----এটা তুমি আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছো মা,, এতো অন্ধকার কেন জায়গাটা!
---আপনারা নিশ্চিতভাবে চলুন আমার সাথে,,আর দেখুন কোনোরকম গন্ডগোল হলে কিন্তু সমস্ত কাজ ভেস্তে যাবে।।
একপর্যায়ে তারা ফ্রিজ বাক্সের কাছাকাছি চলে এলো।।।
২৹৪ নং বাক্সের সামনে এসে থেমে গেলো আকঙ্খা।।। এই বাক্সেই রাখা আছে পারমিতার লাশ,,, গতকাল রাতে একটা ঝামেলা হয়েছিলো ঠিক,, কিন্তু আজ আসার সময়ে এক নার্সের দ্বারা বক্সটা চেক করিয়ে তবেই পারমিতার মা দাদাকে নিয়ে এসেছে এখানে।।।
---আপনারা সেই সময়ে আমার মুখের কথা বিশ্বাস করেন নি,, এবার নিজেদের চোখেই মেয়ের লাশ দেখে নিন,,,
পারমিতার দাদা আর মায়ের সামনে বক্সটা ধীরে ধীরে খুলতে লাগলো আকাঙ্খা।।।
এর পর্যায়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো পারমিতার লাশ।।।
দাদা ---মা পারমিতাকে দেখে হুহু করে কেঁদে উঠলেন।।।
---এইতো আমাদের পরি,,,,, আমাদের পারমিতা।।।পরি মা,,, মারে আমরা ভাবতেই পারেনি কোনোদিন তোর লাশ ফিরে পাবো।।।
---দেখুন আপনারা এভাবে কান্নাকাটি করবেন না,,, আমি আগেই কিন্তু সাবধান করে দিয়েছিলাম,,, ব্যপারটা জানাজানি হয়ে গেলে ,গন্ডগোল বেঁধে যাবে। আর হাসপাতালে আমি আপনাদের পেসেন্টের পরিচয় দিয়ে নিয়ে এসেছি,যাতে কেউ আসল কারনটা এক্ষুনি জানতে না পারে ।।সো প্লিজ।। প্লিজ।।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ পারমিতার লাশের দিকে চোখ পড়লো আকাঙখার।।।
---হে আল্লাহ,,,, এটা কি দেখছে সে নিজের চোখের সামনে।।নিথর হয়ে পড়ে থাকা পারমিতা ডেডবডি চোখ মেলে আছে,,,,!!!!কিন্তু একটু আগেই তো যখন ফ্রিজ থেকে বের করা হয়েছিলো তার চোখ বন্ধ ছিলো,,, এখনো স্পষ্ট মনে আছে আকাঙ্খার।।
চলবে,,,,,
পরের পর্বের লিংক ----
, কোন পাঠকগণ আগের পর্ব গুলো মিস করে থাকেন। তাহলে দয়া করে কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদান্তে,
© Mou
0 Comments