Subscribe Us

Advertisement

Bengali Story - Paromita - আমি পারমিতা - Part - 10

         গল্প পারমিতা💙

                           পর্ব ১০



----ড্রাইভার গাড়িটিকে একটা নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়।।লোকদুটো তখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,,,।।আমি নিজের প্রান বাঁচানোর জন্য লড়াই করে গেছি।।। 

কিন্তু দুর্ভাগ্য,, শেষ রক্ষা হলো না আমার।। 


ওরা জোর করে আমার মুখের ভেতরে কয়েকফোঁটা বিষ ঢেলে দিলো।। 


আমি বুঝতে পারলাম আর নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব হলো না।।ওরা আমাকে বাঁচতে দিলো না।। 


মুখ দিয়ে বিষটা যতটা সম্ভব ফেলে দেবার চেষ্টা করি,,,।।।ওদের মনে এতে একটা ভয় আর সন্দেহর সৃষ্টি হয়।।যদি ভুলক্রমে হলেও বেঁচে যাই আমি।। 


এরপর আবারো একটা ফোনকল আসে.... 


---কি কাজ হয়ে গেছে?? 


---হ্যাঁ,,, এইতো।।।হয়ে এসেছে।। এক্ষুনি হয়ে যাবে। 


অন্য লোকটা ফোনটা টেনে নিয়ে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো।। 


---একটা বড়ো ব্লান্ডার হয়ে গেছে!!!!


---কি হলো আবার,, কাজটা কি ঠিকঠাক করতে পারলে না তোমরা? 


---উনি তো বিষটা ফেলে দিয়েছেন মুখ দিয়ে,,,


---আরে,,,কিছু হবে না তাতে,, এই বিষের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই তোমাদের।।ওকে মারার জন্য এর মাত্র এক ফোঁটাই যথেষ্ট।।চিন্তা করো না। 


আমার দুচোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছিলো,,, বুঝতে পারছিলাম একবার চোখ বুঝলে আর কোনোদিন জেগে ওঠতে পারবো না ,,,নিজের প্রিয়জনদের মুখগুলো আর কোনোদিন দেখা হবে না।।মা,, ছোট ভাই, দাদা, দাদী,, সবার চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো।।। 


সবথেকে বেশী মনে পড়েছিলো আরফানের কথা।।আরফানের সাথেও আর কোনোদিন দেখা হবে না,,,ওর বৌ হওয়া হলো না আমার,, ওর সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো। যা আর পূরন হবার নয়।।। 


নিজের চোখে নিজের মৃত্যু যন্ত্রনা দর্শন করা,, নিজেকে মরে যেতে দেখা কতটা কষ্ট আর যন্ত্রনাদায়ক আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। 


আকাঙখার দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে,,, নিজের মনের অজান্তেই কেঁদে দিলো সে।।। 

হে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পারমিতার কথাগুলো শুনে যাচ্ছে।। 


----আচ্ছা,,,তো এখন কি করবো।। 


---কি করবি আর,, চলে আয়।। আর কেউ যাতে কিচ্ছু জানতে না পারে। 


---ঠিক আছে,,


---আর,, হ্যাঁ,, হ্যাঁ, একটা কথা শোন।। 


---কি কথা।। 


---তোদের মনে যদি সত্যি কোনো সন্দেহ থেকে থাকে,,, যদি ও বিষটা ফেলেই দিয়ে থাকে,, শিশিটা তো আছে তোদের কাছে??


---হুম,,, আছে তো।। 


---একটা কাজ কর,,,আস্তো শিশিটা ওর পেটের ভেতরে ঢুকিয়ে দে।। যেভাবে পারিস ওটা পেটের ভেতরে চালিয়ে দেবার উপায় বের কর।।। তারপর না মরে আর কোথায় যাবে,,, হ্যাঁ।। 


মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে এসেও কথাগুলো স্পষ্ট কানে বাজছিল আমার,,,কার আমার প্রতি এতো রাগ, এতো ঘৃনা।।।আমি কার কি ক্ষতি করেছি,,কার সাথে কি অন্যায় করেছি,, যার শোধ সে আমার প্রানের বিনিময়ে নিচ্ছে।। 


----আচ্ছা,,, তাহলে সেটাই করি।।। আপনি নিশ্চিত থাকুন।। 


---ওকে,, আর এটাকে মার্ডার থেকে এক্সিডেন্ট কেস বানানোর দ্বায়িত্ব কিন্তু তোদের,, ওকে মারার পরে গাড়িটা এমন কিছু করে দিবি যাতে মনে হয় এক্সিডেন্ট করে মৃত্যু হয়েছে, আর ড্রাইভারটিকেও সাথে রাখিস,,,ওকে ছেড়ে দিস না।। 


---কিন্তু এসব করে কি আদৌ লাভ আছে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বেরোলে সবাই তো আসল ঘটনা টা জেনেই যাবে।। 


---আরে ধুর,,, আসল কারণ জানলে আমাদের কি,,, কে মেরেছে,, কেন মেরেছে সেই প্রমাণ পুলিশ কোথা থেকে পাবে,,যদি তোরা কিছু না স্বীকার করিস। আর আমি,,, আমি যে এই কাজের সাথে জড়িয়ে আছি কেউ ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারবে না।। 

আচ্ছা, ঠিক আছে, এখন যা বলছি সেগুলো ভালো করে কর।। 


লোকদুটো আমার চেপে ধরে বিষের শিশিটা মুখের ভেতরে পুরে দিলো,,,তাদের বাঁধা দেবার শক্তি টুকু অবশিষ্ট নেই আমার ভেতরে।।। 


তারপর একপ্রকার জোর জবরদস্তি করে ঠেসে শিশিটা আমার গলা পেট পর্যন্ত চালিয়ে দেওয়া হয়....,,


চোখদুটো পুরোপুরি ঝাপসা হয়ে আসে,,,।। গলা থেকে বুক পর্যন্ত অসম্ভব রকমের জ্বলতে শুরু করে,,,,।।।মাথাটা ভন ভন ঘুরতে শুরু করলো,,,নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো ক্রমশ।।।। 


নিজের মৃত্যুকে খুব নিকট থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম আমি,,, তখন বাঁচতে খুব ইচ্ছে করছিলো আমার,,,সবাইকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছি এটা কিছুতেই মানতে পারছি না,,, একটা প্রচন্ড জেদ চেপে ধরলো আমাকে।। 

নাহ!!! আমি মরবো না,, আমি বেঁচে থাকবো।।কিছুতেই মরবো না আমি।।


আমার প্রতি কার এতো ঘৃনা, দ্বেষ,, সেটা না জানা পর্যন্ত আমি মরতে পারি না ,,যে আমাকে আমার জীবন থেকে বঞ্চিত করলো,আমার স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত করলো তার শাস্তি না দেখে মরবো না আমি।। 

আমাকে যে করেই হোক বেঁচে থাকতেই হবে, কিছুতেই মরতে পারি না আমি।। 


এরপর ক্রমে ক্রমে আমার চোখজোড়া বন্ধ হয়ে আসলো আমার।।। তারপর আর কি হলো আমি জানি না।।।শুধু এইটুকু জানি ওরা সেদিন বাঁচতে দেয় নি আমায়,,,,ওদের জন্য আজ এই করুন পরিণতি আমার।।। 

ওদের জন্য আমি মরেও মরতে পারি নি,,, মনের ভেতরের একটা তীব্র আকাঙখা ,,,কিছু জানার অতৃপ্ত তৃষ্ণা আজো বাঁচিয়ে রেখেছে আমায়।। 


নিজের চোখের জল শুকিয়ে গেছে এতোক্ষণে আকাঙখার !!তার মানে পারমিতা এখন পর্যন্ত জানে না তাকে কে খুন করিয়েছে,, কার জন্য মারা যেতে হয়েছে তাকে।। 


---তার মানে তুমি নিশ্চিত নও।।সেদিনের ফোন কলটা কার ছিলো।।।সে তোমাকে খুন করিয়েছে এখন পর্যন্ত জানতে পারো নি তুমি,, তাই তো?? 


---নাহ।। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই।।তবে কন্ঠস্বর বেশ পরিচিত মনে হয়েছিলো আমার,,,।।।মৃত্যুভয় তখন আমার ইন্দ্রিয়শক্তি ক্রমশ দুর্বল করে দিচ্ছিলো।। তাই হয়তো বুঝে উঠতে পারি নি।।। 


---আচ্ছা,,, তুমি নিজের এই কথাগুলো আমায় তো আরো আগে বলতে পারতে।।হঠাৎ আজকেই কি এমন ঘটলো,,, আজকেই কেন বললে আমায়।। 


----আমার একজন বিশ্বাসযোগ্য মানুষের প্রয়োজন ছিলো।।আমি তার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম,,,যখন দেখলাম তুমি আমার মা দাদাকে খুঁজে তাদেরকে আমার কাছে নিয়ে এসেছো,,,তার মানে তুমি নিশ্চয়ই আমার ভালোটাই চাইবে,আমার প্রতি আগ্রহ আছে তোমার ।।।তখন স্থির করি তোমায় সবটা খুলে বলবো।।।কারন তুমিই একমাত্র পারবে আমায় সাহায্য করতে।।। 


সাহায্যের কথা শুনে চমকে উঠলো আকাঙখা।। 


---সাহায্য।।। কিসের সাহায্য!!???? 

আর আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও,,, আরফানের কাছে কেন সাহায্য চাইলে না তুমি।। ও তো তোমার প্রেমিক ছিলো একদিন।। তোমরা তো একে অপরকে ভালোবাসতে।।।আমার মনে হয়, তুমি এখনো আরফানকেই ভালোবাসো।। তবে তাকে ছেড়ে আমার কাছে কেন সাহায্যে আবেদন করছো???তাকে কী বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি তোমার?? 


আকাঙখার প্রশ্নগুলো শুনে পারমিতা চুপ হয়ে গেলো,,, তার মাথা নিচু হয়ে যায়।।। 


আকাঙখা বেশ অবাক হলো।।। 


---আরফানকে আমি কেন বলিনি পরে তুমি হয়তো নিজেই বুঝতে পারবে,,,, আর বুঝতে না পারলে আমি নিজেই খুলে বলবো তোমায়।। 


---ও আচ্ছা,,,তা আমি তোমাকে কিভাবে সাহায্য করবো,,সেটা তো বলো।। 


---তুমি যে আমার মা দাদাকে খুঁজে হাসপাতালে নিয়ে এসেছো,,, এটা সবাইকে জানিয়ে দাও।। কারো কাছে যেন গোপন থাকে না কথাটা।। 


---সেটা করে কি কোনো লাভ হবে?? 


---হতে পারে,,, আমার এইটুকু অনুরোধ রাখো,, তুমি সবাইকে আমার আর আমার দাদা মার ব্যপারে জানিয়ে দাও।। 


---ঠিক আছে,, তুমি যেমন বলবে তেমনটাই হবে।। আর আমাকে অনুরোধ করতে হবে না তোমার। আজ থেকে তোমার সাথে আছি আমি,,, আর নিজেকে একা ভেবো না।। 

আমিও চাই আসল ঘটনা উদ্ঘাটন হোক,,, তাতে শুধু তোমার না,,, আমার ও বিশেষ কিছু লাভ আছে,,,হয়তো আমার মনে দানা বেঁধে থাকা সংশয়ের লাঘব হবে তাতে,,,কিছুটা হলেও হবে।। 


যদি সংকোচ বোধ করো তবে ভেবে নাও আমি যা করছি তোমার জন্য,,একপ্রকার নিজের স্বার্থের জন্য করছি।।।


----তুমি সত্যি অনেক ভালো মনের মানুষ!!তোমার সাথে কথা বলে আবার আমার ভীষন বাঁচতে ইচ্ছে করছে।।।সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত জীবনের মর্ম ,,আমার মৃত্যুই বুঝিয়ে দিয়েছে আমায়।। 


---আমি ভালো মনের মানুষ কিনা জানি না,, তবে তোমার মতো একটা মেয়ের জীবন প্রদীপ জ্বলে ওঠার আগেই নিভিয়ে দিয়েছে যারা,, তাদেরকে আমিও শাস্তি দিতে চাই।।আমিও তাদের আসল পরিচয় জানতে চাই।।আর এটাও জানতে চাই তারা কেন এটা করলো তোমার সাথে?? 


----ঠিক আছে,,,আমায় তবে এবার হাসপাতালে নিয়ে যাও।।।তোমার সাথে এক সাধারণ মৃতদেহের মতো যাবো আমি,,,,আর আমার আসল সত্যটা আর কেউ যাতে জানতে না পারে,,এখন শুধু তুমিই জানবে।।। 


আকাঙখা পারমিতার মৃতদেহকে গাড়িতে তুলে আবারো হাসপাতালের দিকে রওনা দিলো,,, এদিকে আরফান ফোনের ওপর ফোন দিয়ে চলছে।। 


আকাঙখা তার ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখে দেয়,,,।। 


গাড়ির পেছনের সিটে নিথর হয়ে শুয়ে আছে পারমিতার লাশ,,,ওর দেহে এখন আর স্পন্দন নেই,, মুখে কোনো উচ্চারণ নেই।।।একটা মৃতদেহ ছাড়া কিছু নয় পারমিতা।। 


চলবে,,,,,


Next part link-- 

👉(#next) কথাটি লিখে যাবেন


যদি, কোন পাঠকগণ আগের পর্ব গুলো মিস করে থাকেন। তাহলে দয়া করে কমেন্ট করে জানাবেন।

ধন্যবাদান্তে,

© Mou

Post a Comment

0 Comments